মাঠ ফেটে চৌচির ,ক্ষেতে পানি না থাকার কারণে ধানের চারা গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে । বেড়েছে সার ও তেলের দাম । ফলে আর্থিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষক নিয়মিত ভাবে জমিতে সার ও সেচ দিতে পেরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষ ।
সরজমিন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়,অধিকাংশ ধানের ক্ষেতে পানি নেই । সেচ না দেয়া,তীব্র খরা,অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ধান শুকিয়ে যাচ্ছে । সার ও তেলের দাম বৃদ্ধিতে এ এলাকার একাধিক কৃষক ধানের ক্ষেতে নিয়মিত পানি দিয়ে পারছে না । ফলে এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । চলতি বছর খাদ্য সংকটের দেখা দিতে পারে বলে অনেক কৃষক আশা করছেন ।
শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন,এবার ৫০ শতক জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি । জমি প্রস্তত করতে শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে বেশ টাকা । জমিতে ধানের চারা রোপনের করার পর বাড়তি পরিচর্যা শুরু করি । এবার তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে নিয়মিত জমিতে সেচ দিতে পারছি না । সারের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা । আগে যে সার ১৬ টাকায় কিনতাম এখন তা ২২ টাকায় কিনছি । আবার তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে অনেক টাকা ফলে আমাদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে । তেল ও সারের দাম যদি পূর্বের অবস্থানে না আসে তবে আগামীতে আমরা অধিকাংশ ফসল উৎপাদন করতে পারবো না ।
পানির অভাবে ধান ক্ষেতের চারা শুকিয়ে পড়ছে। ছবি : দৈনিক মাগুরা
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, আর্থিক অভাব অনাটনের কারণে এবার নিয়মিত ক্ষেতে সার ও সেচ দিতে পারছি না । যেখানে প্রতিদিন ক্ষেতে ৩ বার সেচ দিতাম এখন ২ বারই সেচ দেয়া কঠিন হয়ে দাড়িঁয়েছে । সকাল ৭টায় ক্ষেতে সেচ দিলে দুপুর ১২ টার মধ্যে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে । তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে । গত বছর এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত ছিল ,আবহাওয়া ছিল ভালো ফলে ধানের ফলন ভালো হয়ে ছিল কিন্তু চলতি বছর ধানের ফলন ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।
অপর এক কৃষক ইসমাইল হোসেন জানান,এবার আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকার কারণে আমাদের আমন চাষ মারাত্বক ব্যাহত হচ্ছে । চলতি বছর বৃষ্টি কম,খরা বেশি । ধানের জন্য দরকার বৃষ্টি ও নিয়মিত সেচ দেওয়া কিন্তু এবার সার ও তেলের দাম অত্যাধিক পরিমানে বেড়ে যাওয়ার কারণে চাষীরা ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে ।
এখন সার ও ঔষধ এর দাম বেশি থাকায় আমাদের চাষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । এখন প্রতি বস্তা টিএসপি ৯শ’ টাকা ও সৌদি টিএসপি ১১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগের দামের তুলনায় অনেক বেশি । আমি এবার ১ একর জমিতে চাষ করেছি । পূর্বের তুলনায় এবার জমিতে সার দিতে আমার অনেক টাকা খরচ হচ্ছে । ক্ষেতে যে পরিমানে সেচ দেওয়ার কথা কিন্তু সে পরিমানে সেচ দিতে পারছি না । ফলে আমাগীতে ভালো ফলন না হলে শঙ্কিত অবস্থায় আছি ।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ,কৃষিবিদ সুফি মো: ফরিদুজ্জামান জানান,চলতি মৌসুমে জেলায় ৬১ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে । তার মধ্যে সদরে ২৩ হাজার ৬৫৭ হেক্টর,শালিখায় ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর,মহম্মদপুরে ২ হাজার ৯৭৩ হেক্টর ও শ্রীপুরে ১০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে । আমন মুলত প্রকৃতি নির্ভর একটি চাষ । ভালো বৃষ্টি হলে আমন ধানের ফলন ভালো হয় । কিন্তু এবার বৃষ্টি একেবারেই নেই ফলে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে । আমরা কৃষকদের বার বার সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি । অনেক এলাকায় এবার তীব্র খরায় ধানের জমিতে ফাটল দেখা দিচ্ছে ফলে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ।
আমরা কৃষি বিভাগ থেকে মাঠকর্মীদের দ্বারা সেসব এলাকার কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি ।এ বছর আমন ধানের রবি-৭১,৭৫,৮৭ ও বিনা-১৭ জাতের বীজের চাষ জেলায় বেশি হয়েছে । উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৩১৬ হেক্টর । আশা করছি আমন মৌসুম উঠার আগ পর্যন্ত কৃষকরা যদি একটু সচেতন ভাবে জমিতে সেচ ও পরিচর্যা করে তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ।