বরিশাল বিভাগের ছোট্ট একটি জেলা পিরোজপুর। এ জেলার আয়োতন প্রায় ১২৭৭.৮০ বর্গ কিলোমিটার। জন সংখ্যার দিক দিয়ে নারীর থেকে পুরুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। এ জেলায় চিকিৎসা সেবার জন্য বিভিন্ন ধররেনর অবকাঠামো থাকলেও চিকিৎসার মান নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে এক ধরনের মিস্র প্রতিক্রিয়া বিরাজমান ছিলো। বিশেষ করে হাসপাতাল গুলোতে শিশু ও কৌশর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক কিশোর-কিশোরী বঞ্চিত ছিলো এক সময়।
এ জেলার কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্তন আনেন শিশু সংগঠন এনসিটিএফ। এই পরিবর্তনের ভূমিকায় ইয়েস বাংলাদেশ দেশের ৪০টি জেলায় জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিশু ও যুব নেতৃত্ব বিকাশে ইতিবাচক ভাবে সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ওয়াই মুভস প্রকল্পের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ইয়েস বিডি ৪০টি জেলায় সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে কৈশোর বান্ধব কর্নারে রোগিদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন চিকিৎসকেরা ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুর জেলার মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে এক সময় কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কর্নার ছিলো না। সেখানে কিন্তু প্রতিনিয়ত জেলার শিশু-কিশোররা তাদের স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হতো। এখন সেখানে একটি কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কর্নার করা হয়েছে। যেখানে সেবা নিতে আশা কিশোর-কিশোরীরা এখন সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে শিশুদের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, বয়:সন্ধিকালীন সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
তাছাড়াও এখানকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ২১ শতাংশই কিশোর-কিশোরী ও তরুন-তরুনী রয়েছে। যেখানে প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান ছাড়াই এদের এক বিরাট অংশ কৈশোর কালেই বিয়ে,গর্ভধারন এবং অল্প বয়সেই মা হচ্ছেন। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও উপলদ্ধি না থাকায় সেখাকার মাতৃত্বহারও বেড়েছিলো। এখন এ জেলায় মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে একটি কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কর্নার থাকার কারনে এগুলোর হার একেবারেই কমে গিয়েছে। নিয়মিত কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন কিশোর-কিশোরীরা। পাশাপাশি সেখানে গর্ভবর্তী মায়েদের জন্যও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সেবার বিষয়ে পিরোজপুর জেলা মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডাঃ মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, আমাদের এখানে মাতৃ কালীন চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তবে আমাদরে এখানে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক সংকট থাকায় অনেক সময় আমাদের সেবা দিতে হিমছিম খেতে হয়।
শিশু ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখানে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমাদের একটা আলাদা কর্নার রয়েছে। যেখানে কিশোর-কিশোরীরা নিশ্চিত্তে স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকেন। তবে তিনি জানান, কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কর্নারটি একটি শিশু সংগঠন এনসিটিএফ ও ইয়েসে বিডির সহযোগিতায় এটা আমরা করতে পেরেছি। তারা অনেক সময় আমাদেরকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা মূলক কাজে সহযোগিতা করে থাকেন।
সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার ইয়েস বিডির ডিসট্রিক ভল্যান্টিয়ার আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ইয়েস বিডি এবং এনসিটিএফ নিয়ে কাজ করে থাকি। তাছাড়াও ওয়াই মুভস প্রজেক্টের এসআর এইআর নিয়ে কাজ করে থাকি ও জেলা এনসিটিএফ কে কি ভাবে সহযোগিতা করা যায় তাদের অভিবাবক হিসেবে আমরা কাজ করে থাকি। আমরা কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা এবং স্কোর কার্ড বিষয়ক কাজ করে থাকি যেটা মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে হয়ে থাকে। মূলত আমরা শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার অধিকার নিয়ে কাজ করি।
এছাড়াও এনসিটিএফ এর সদস্যরা গালর্স টেক ওভার নিয়ে কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে পিরোজপুর এনসিটিএফ এর মালিহা তানজিম জানান, আমি পুলিশ সুপার মহাদয়ের প্রতিকি দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই অনুষ্ঠানে পিরোজপুর জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহাদয় আমাদেরকে এই কাজে অত্যন্ত সহযোগিতা করেছে। পুলিশ সুপারের প্রতিকি দায়িত্ব পালন কালে আমি অত্যন্ত আনন্দদিত এবং কৃতজ্ঞতা বোধ প্রকাশ করছি। এই অনুষ্ঠানে আমি দায়িত্ব পালন কালে আমার মধ্যে এক ধরনের আত্ননির্ভরতা এবং অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিলো। মেয়েরাও যে পারে তারা যে সমাজের মানুষের কাছে এখন আর কোন খেলনার পাত্র নয় তা এখানে বসে আমি অনুধাবন করতে পারছিলাম। আসলেই এটা অন্যরকম একটি পাওয়া।
পিরোজপুর জেলা এনসিটিএফ এর চাইল্ড পার্লামেন্ট মেম্বর দিকে দিব্যামনি তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানান, ন্যাশনাল চিলড্রেন‘স টাস্ক ফোর্স ( এনসিটিএফ ) পিরোজপুর জেলায় কাজ করে যাচ্ছে বহুদিন ধরে। এ জেলার সুবিধা বঞ্চিত শিশু এবং সকল শিশুদের সুবিধা এবং অধিকার নিশ্চিত করোনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমার বাল্য বিবাহ রোধ, শিশু শ্রম রোধ তার পাশাপাশি আবাসন প্রকল্পের শিশুরা কেমন আছে সেই বিষায়ক পরিদর্শন করে থাকি। তাছাড়াও আমরা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন, প্রতিবন্ধী স্কুল ও শিশু পরিবার পরিদর্শন করে থাকি। পিরোজপুর জেলাতে যে সকল যাইগায় পথে বসবাস কারি শিশু আছে তাদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষে আমরা কাজ করে থাকি এবং তাদের অবস্থা উন্নয়নে আমরা কাজ করে থাকি।
অন্যদিকে, পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিত্র একটু অন্যরকম। ১০০ সয্যা বিশিষ্ট এ সদর হাসপাতালে মাত্র ১৭টি বেড বরাদ্দ আছে শিশুদের ওয়ার্ডের জন্য। যার ফলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা দেখা গেছে অনেক শিশু মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান, হাসপাতলে শিশু ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা কম থাকার কারনে এমনটি হয়েছে। তাছাড়া এখন শিতের সময় হবার কারনে শিশু রুগির সংখ্যা বেশি। যার কারনে বাধ্য হয়ে আমরা মেঝেতে চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছি। আশা করি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।