চলতি বছরে মাগুরা জেলার পানচাষীদের র্দুদিন চলছে । বানিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় পান চাষ শুরু না হলেও পান চাষে অনেক সাফল্য রয়েছে । এ চাষে গত বছর পানচাষীরা অনেক লাভবান হয়েছিল । কিন্তু চলতি বছর তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না তাদের । ফলে পান চাসীরা রয়েছেন বিপাকে ।
মাগুরা সদরের আঠারোখাদা ইউনিয়নের অক্কুর পাড়া গ্রামের পানচাষী দিদল বিশ্বাস জানান, এ চাষে পরিশ্রম ও খরচ বেশি । চলতি বছরে আমি ১৫ শতক জমিতে পান চাষ করেছি । জমিতে মাটি পিলি করে ফাল্গুন মাসে পান গাছের বীজ রোপন করি । তারপর বাশেঁর মাচা তৈরি করে সুতা টানাতে হয় । গাছ একটু বড় হলে লাঠিতে বেধে দিতে হয় । এরপর পরিচর্যা বাড়াতে হবে । পান গাছের লতা বড় হতে শুরু করলে খইল দিতে হবে । পোকার আক্রমন থেকে গাছকে বাঁচাতে প্রয়োজন মতো ঔষধ দিতে হবে । একটি পান গাছ পরিপক্ক হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে । গাছ পরিপক্ক হলে একটি পান গাছে ১৫-২০ পান ধরে । নিয়মিত পরিচর্যাও ফলেই গাছে ভালো পান ধরবে ।
তিনি আরো বলেন, গত বছর পানের চাহিদা বেশি ছিল । বিভিন্ন স্থানের পাইকারি আড়তদাররা জেলায় এসে পান ক্রয় করে নিয়ে যেত । পানের বাজার ভালো থাকায় আমরা ভালো দামও পেয়েছিলাম । কিন্তু এ বছর জেলার পানের বাজার খুবই খারাপ থাকায় আমাদেও উৎপাদন খরচই উঠছে না । ১০ বছর ধরে আমি এ চাষ করছি । সবকিছুই মিলিয়ে এবার পানের ভালো ফলন হলেও আমাদেও চলছে র্দুদিন ।
একই গ্রামের অন্য পানচাষী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এ বছর পান চাষের ফলন ভালো হলেও লাভের চেয়ে লোকসান হচ্ছে বেশি । সার,বীজ ও শ্রমিক বাদ যে খরচ হচ্ছে তাতে বেঁচে থাকাই কষ্ট । এ চাষে পরিশ্রম বেশি কিন্তু লাভ কম । গত বছর ভালো পানের পান ৭০-৮০ টাকা পোন ,মাঝারি সাইজের ১ পোন পান ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল । কিন্তু এ বছর পানের চাহিদা কম এবং দামও কম । বাজারে ভালো মানের ১ পোন পান আমরা পাইকেরি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করছি । আর মাঝারি সাইজের পান ১ পোন ১৫-২০ টাকায় পাইকেরি দাম । ফলে আমাদেও উৎপাদন খরচ উঠছে না বরং ভুর্তক্তি দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । তাই চাষ থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে । এ চাষের পাশাপাশি আমি ধান,পাট,সরিষা সহ অন্যান্য করছি । তাতে ভালো লাভ হচ্ছে ।
পানচাষী রাজকুমার,নৃপেন বিশ্বাস,সত্যেন বিশ্বাস ও মনিকুমার আক্ষেপ করে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আমরা এ চাষের সাথে যুক্ত । বাপ-দাদার এ চাষ আমরা বংশ পরাপর করে আসছি । এ চাষে এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে আমরা কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি । কোন কৃষি কর্মকর্তা আমাদের মাঠ পরিদর্শনে আজও আসেনি । তাই আমরা সকল চাষে তাদেও সহযোগিতা কামনা করছি । তারা আরো বলেন,এ বছর পানের বাজার মন্দা থাকায় আমরা খুবই বিপাকে আছি । শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য খরচে আমাদের নিজের পুজিঁ খরচ করতে হচ্ছে ফলে চাষীরা এ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ বলছে , জেলায় পান চাষের উৎপাদন খুবই কম । জেলার সব অঞ্চলে এ চাষ হয় না । এ চাষে জেলার কৃষকদের আগ্রহ কম । চলতি বছর ১০ হেক্টর জমিতে জেলায় পান চাষ হয়েছে । যদি এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ে তবে কৃষি বিভাগ তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা করবে ।