1. dainikmagura@gmail.com : magura :
স্বাধীনতা পদক পাওয়া আমির হামজা ছিলেন 'যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত' আসামি | দৈনিক মাগুরা
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন

স্বাধীনতা পদক পাওয়া আমির হামজা ছিলেন ‘যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত’ আসামি

হেলাল হোসেন,মাগুরা
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২
  • ৩৬৯ জন দেখেছেন
সাহিত্যিক হিসেবে আমির হামজা স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় তার নিজ জেলা মাগুরাতে সুধী সমাজের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাবের সঙ্গে জেলার নামটি জড়িয়ে যাওয়ায় আমির হামজার পরিবারের মতো মাগুরার সাধারণ মানুষ যেমন খুশি হয়েছেন; তেমনি হত্যা মামলার একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার খেতাব নির্বাচন নিয়ে সুধী সমাজের মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার দেশের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১০ জনের পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানের নামে স্বাধীনতা পদক ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকেই বিশেষ করে সাহিত্যে অবদান হিসেবে আমির হামজার নাম ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই সমালোচনা চলছে।
মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারাজেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসেবে পরিচিত। তবে বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জেলার বরিশাট গ্রামের নিহত শাহাদত হোসেন ফকিরের ছেলে দিয়ানত ফকির বলেন, গরুতে ক্ষেতের ফসল খাওয়ার ঘটনা নিয়ে হামির হামজার পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমির হামজা এবং তার ভাই রব্বানী সরদারের নেতৃত্বে আমার বাবার উপর হামলা চালানো হয়। তারা নির্মমভাবে আমার বাবাকে কুপিয়ে খুন করে। একই সময়ে সাবান মোল্যার আড়াই বছরের শিশু শিল্পীকে সড়কির আঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা।
তার এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় আরও অনেকের কাছ থেকে। একইসঙ্গে ওই মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করেন একই গ্রামের আফজাল মোল্যা। তিনি বলেন, আমির হামজাদের সঙ্গে দল করায় আমি আসামি হয়েছিলাম। এই হত্যা মামলার কারণে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।
আমির হামজা সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও তার কবি গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন অনেকে। তাৎক্ষণিক গান রচনা এবং পরিবেশনের কারণে তার সুখ্যাতি যেমন রয়েছে পাশাপাশি সাহিত্যগুণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নয়, জিয়াউর রহমানকে নিয়েও গান লিখেছেন যা সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আছে বলে স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সামাজিক সংগঠন সারথী ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিএনপি নেতা শিকদার মনজুরুল আলম বলেন, আমির হামজার প্রথম বই ‘বাঘের থাবা’ আমি প্রকাশ করে দিয়েছি। তিনি পালাগান করতেন। অনেকে তাকে হায়ার করে নিয়ে যেতেন। যেখানে বসতেন সেখানেই গান কবিতা লিখে ফেলতেন। অনেককে নিয়ে তার গান কবিতা আছে।
ছড়াকার আবু সালেহ, ফারুক নওয়াজসহ সাহিত্যাঙ্গণের কেউ কেউ আমির হামজার পদকপ্রাপ্তিতে সাধুবাদ জানালেও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
মাগুরার প্রবীণ কবি মিয়া ওয়াহিদ কামাল বাবলু বলেন, নিজে সত্তরের দশক থেকে মাগুরার সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ করলেও তার সম্পর্কে ভালোকিছু সামনে আসেনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, পালাগান করতেন; এর জন্যে স্থানীয় কোনো সংগঠন তাকে পুরস্কার দিতে পারতো কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পদক এটি যথাযথ হয়নি। নির্বাচকদের যোগ্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।
হামির হামজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার এই পদকপ্রাপ্তির জন্যে আবেদন করেছিলেন তার সন্তান আসাদুজ্জামান। তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত আছেন।
পদক পাবার বিষয়ে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য। তবে জীবদ্দশায় বাবাকে ভালো মানুষ হিসেবে জেনেছি। তিনি উদার মানুষ ছিলেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। আমি তার সন্তান হিসেবে তার রচিত গান কবিতাগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তারই স্বীকৃতি দিয়েছেন রাষ্ট্র। এটি সারা মাগুরার মানুষের জন্যে গৌরবের। তবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বাবার কোনো লেখা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২১-২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক মাগুরা.কম
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )