সিদ্দিকুর রহমান (৫৫)। বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের চরপাচুড়িয়া গ্রামে। তাঁর গ্রাম থেকে উপজেলা শহরের দূরত্ব চার কিলোমিটার। মধুমতি নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কটির দুইশ’ গজ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি দুই কিলোমিটার রাস্তায় একহাটু কাদা। প্রতিদিন নানা কাজে সারাদিনে চার-পাঁচবার উপজেলা শহরে তাঁকে দুইশ’গজ সড়কে হাটু থেকে কোমর পানি ও দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভয়াবহ কাদা মাড়িয়ে চলতে হয়। শুধু সিদ্দিকুর রহমান নন-বিকল্প কোনো সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় চড়পাচুড়িয়া গ্রামের সাড়ে তিন হাজার লোক ও আশপাশের আরও তিন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরুপায় হয়ে এই পথ দিয়ে চলতে হয়। এ পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।এই সড়ক দিয়ে চর পাচুড়িয়াসহ ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার চরনারানদিয়া,রায়পাশা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।
এলাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এ গ্রামটির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সাথে বিরোধ ছিলো। প্রায় দুই বছর আগে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সীমানা বিরোধের কারণে এখানে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যায়নি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত মধুমতি নদী পাড়ের চর পাচুড়িয়া গ্রামটিতে নুন্যতম কোনো নাগরিক সুবিধা নেই।
নান্নু মিয়া (৪০) জানান, উপজেলা সদরে বাস করে আমরা চরম অবহেলিত। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার।উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। নানা কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয় পানি ও কাদা মাড়িয়ে।নূরুল ইসলাম (৩০)বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলোনা। কয়েকটি অংশে বিদ্যুৎ আসলেও রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাথে আছে মধুমতির ভাঙন। ভাঙনে বিস্ত্রীর্ণ ফশলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। অরিন ও সুমি মহম্মদপুর উপজেলা সদরের একটি স্কুলের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা জানান, স্কুল কলেজ অফিস সব মহম্মদপুর উপজেলা সদরে। কোমর পানিতে কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হয়।গায়ের কাপড় গায়েই শুকাতে হয়।
আরশাদ মোল্যা (৬২)জানান,রাস্তাঘাট নাই বলে আমাদের গ্রামে কোনো ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয় না। মানুষ এই গ্রামে কোনো আত্মিয়তা করা যায় না। আত্মীয় স্বজন বিপদে না পড়লে বেড়াতে আসেন না।
নান্নু মিয়া (৪০) জানান, তার মেয়ে কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সারারাত চেষ্টা করেও হাসপাতালে নিতে পারিনি।রাস্তা না থাকায় কোনো যানবাহন চলেনা।ভোরে কয়েক জনের সহযোগিতায় ঘাড়ে করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
শিলা পারভিন (৩৫) বলেন, কিছুদিন আগে গ্রামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আসতে না পারায় ১০-১২ টি ঘর আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক আমিনুর রহমান জানান, এক লাখ টাকা দিয়ে ইজিবাইক কিনেছি। রাস্তা না থাকায় যাত্রী নাই। বেকার বসে আছি। গাড়ি বাড়ি নিতে পারি না। এক আত্মিয়ের বাড়িতে রেখে দেই।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল জানান, সদর ইউনিয়নের এক নম্বর মৌজায় চর পাচুড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। দীর্ঘ দিন ধরে সীমানা বিরোধ থাকায় এথানে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া যায়নি। এবার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এস এ রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। এখন উন্নয়নে প্রকল্প নিতে আর বাঁধা নেই। চর পাচুড়িয়া বাসীর সমস্যা সমাধানে দ্রুত সম্ভব অগ্রাধীকার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।