প্রায় দুই বছর আগে বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে মা অন্যত্র চলে যান বাবাকে ছেড়ে। বাবা কিছুটা সুস্থ হলে সে ও ছেড়ে চলে যান বাড়ি। এরপর দাদা-দাদীর কাছে দু বছর পড়াশোনা করলেও দারিদ্রতার কারণে অন্যের বাড়িতে ঢাকায় কাজ করতে যান শিশু আকলিমা (১১) । সেখানে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন শিশুটি। কথায় কথায় তার উপর চালানো হত পাশবিক নির্যাতন। কখনো তাকে খেতে দেয়া হতো শিশুর বমি ও প্রস্রাব। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এমনটাই বর্ণনা দিলেন শিশু আকলিমা। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি শিশুটি। শিশু আকলিমার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামে। সে ওই গ্রামের কুবাদ শেখের মেয়ে।
শিশুটির দাদি মনোয়ারা বেগম জানান, তিন বছর আগে তার ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বউ তাকে ছেড়ে অন্যত্র্য বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পর ছেলে ও অন্যত্র চলে যায়। ছেলের মেয়ে আকলিমাকে প্রথমে মাদ্রাসা ও পরে স্থানীয় স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এরপর প্রতিবেশী বাবু বিশ্বাস তার শিশু সন্তানকে দেখাশোনা করার কথা বলে আকলিমাকে ঢাকাতে মিরপুর ২ এর বাসায় নিয়ে যায়। বিনিময় প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ও তার ভরণপোষণ দেওয়ার কথা বলে। দীর্ঘ ১৮ মাস ঢাকা তে থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝে ফোনে কথা হলে জানাই আকলিমা ভালো আছে। আমার নাতির মুসলমানির অনুষ্ঠানে আসার জন্য বাবু শোখকে অনুরোধ করলে গতকাল বুধবার তাকে মাগুরাতে নিয়ে আসা হয়। এরপর আমরা দেখি তার শরীরে কিছু নাই পরবর্তীতে তার মুখের থেকে শুনি তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয়নি। এমনকি তাকে বাচ্চার বমি ও প্রস্রাব খাওয়ানোর হয়েছে।
হাসপাতালের বেডে নির্যাতনের শিকার শিশুটি বলেন, তাকে কাজে নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্মী লিপি খাতুন হাতের কাছে যখন যেটা পেয়েছো সেটা দিয়েই তাকে টর্চার কোরতো। এমনকি তাকে শিশুর বমি করা ভাত ও বমি রুটির সঙ্গে জোর করে খাইয়ে দিত। বিভিন্ন সময়ে শিশুটির প্রসাব তাকে জোর করে খাওয়ানো হতো। মাঝে মাঝে তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হতো। বাড়িতে যখনই ফোনে কথা বলার সুযোগ হত তখনই তাকে আরও নির্যাতন করা হবে বলে ভয় দেখানো হতো। যে কারণে বাড়িতে কথা হলেই ভালো আছি বলতেন শিশুটি।
আকলিমার দাদা তজলু শেখ এ নির্যাতনের বিচার চেয়ে মাগুরা সদর থানায় বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান জানান, শিশুটি ভর্তি হওয়ার সময় তার শরীরে একাধিক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এমনকি শিশুটি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিপির স্বামী বাবু বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে এই প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করতে চান।
শিশুটির দাদার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে হাসপাতালে শিশুটির খোঁজখবর নেন মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম। রাতেই অভিযুক্ত মাসুদুর রহমান বাবু বিশ্বাসের কলেজ পাড়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাবু বিশ্বাস এর স্ত্রী লিপি বেগম কে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেন। বাবু বিশ্বাস মৃত মশিউর রহমান বকুলের ছেলে। মাসুদুর রহমান বাবু বিশ্বাস মিরপুর-২ এ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি ঔষধ কোম্পানি ইনসেপটা তে কর্মরত ছিলেন।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, শিশুটির দাদার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাবুর স্ত্রীকে লিপি খাতুন কে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাবুকে আটকের চেষ্টা চলছে।